বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ পুরস্কার পাওয়া নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। সমালচনার ঝড় বইছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ পরিস্থিতিতে খোদ পুরস্কারদাতা সংস্থাটির প্রধানও এ ব্যাপারে দায়-দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামের একটি এনজিও তাকে পুরস্কারটি দিয়েছে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই। সাড়ে তিন বছর পর বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে এ পুরস্কারের ব্যাপারে জানায়। এ নিয়ে জনমনে বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।
সিএইচআরআইও’র প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট মারিও গুইলম্বোর জানিয়েছেন, এ অ্যাওয়ার্ডের বিষয়টি তাদের আন্তর্জাতিক সেক্রেটারিয়েট ডিল করেনি।

কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট মারিও গুইলম্বোর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলাপ হয়েছে। মারিও জানিয়েছেন, এ অ্যাওয়ার্ডের বিষয়টি তাদের আন্তর্জাতিক সেক্রেটারিয়েট ডিল করেনি। বেগম জিয়াকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার বিষয়টি এশিয়া মিশনের সিদ্ধান্ত। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, অ্যাওয়ার্ডের বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলবেন না। এ ব্যাপারে এশিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক মোমিনুল হক কথা বলবেন।

বেগম জিয়াকে পুরস্কার দেওয়ার প্রক্রিয়াটি কীভাবে হলো- এ প্রশ্নের জবাবে মোমিনুল হক বলেন, ভারতের একটা মেয়ে আমাদের সঙ্গে কাজ করতো। তার বন্ধু বাংলাদেশি। মেয়েটি বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। তার মাধ্যমেই আমাদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রপোজাল আসে।মোমিনুল হক আরও বলেন, ২০১৮ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে যান। তার দল এবং আইনজীবীরা বলছিলেন, কোর্টের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ততদিনে অনেক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে। গুম হয়েছে। আমরা এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।

তিনি বলেন, আমরা মনে করলাম, খালেদা জিয়া সত্যিই নিপীড়নের শিকার। আমার সহকর্মীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানেন না। আমার মাধ্যমে তার ব্যাপারে তথ্য জানলেন। আমি তাদের এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতন্ত্রের জন্য বেগম জিয়ার অবদানের কথা জানালাম। ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ’৯৩ সালে রোহিঙ্গাদের কল্যাণে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি, বিভিন্ন সংস্কার এবং সর্বশেষ ওয়ান ইলেভেন আমলে কারাবন্দী হওয়ার তথ্যগুলো জানালাম।

এর মধ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে আমাদের চিঠি দেওয়া হলো। হাইকমিশনার মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হলো, এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া ঠিক হবে না। বেগম জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারারুদ্ধ।মোমিনুল বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আরও ইনভেস্টিগেট করব। ৩০ তারিখের প্রোগ্রাম ক্যানসেল করলাম না। তবে সিদ্ধান্ত হলো, অনুষ্ঠানে বেগম জিয়ার পুরস্কার ঘোষণা করা হবে না। রোহিঙ্গা ও অন্যান্য ইস্যু, ভারতের কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে কথা বলা হবে। উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে কথা বলব।
মোমিনুল বলেন, আমরা ফারদার ইনভেস্টিগেট করলাম। ২০১৯ সালে সিদ্ধান্ত নিলাম পুরস্কারটা ঘোষণা করব।

তারা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ কানাডার হাইকমিশনারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাইকমিশন সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে।
মোমিনুল এ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা ঢাকাস্থ কানাডার হাইকমিশনারকে চিঠি লিখেছিলাম। পুরস্কারটি হস্তান্তরের জন্য ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাইকমিশনের সাহায্য চেয়েছিলাম। ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর তারা বললেন, কোভিড পরিস্থিতিতে তারা এ কাজে কোনো সহযোগিতা করতে পারবেন না।