অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে প্রতিবন্ধীতা জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধী শফিউল আলম। শারীরিক প্রতিবন্ধীতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি ছুঁতে চান চূড়ান্ত সাফল্যের চূড়াকে। প্রতিবন্ধীতাকে জয় করে ইতিমধ্যেই নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন তিনি। তাছাড়া শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়া সত্বেও এরকম অনেকে এমন সৃজনশীল কাজ করেন যা আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা যোগায়।
সবুজে শ্যামলে আকাঁবাঁকা পাহাড়ী গ্রাম,যতদুর যায় চোখ জুড়ানো শবজির সৃজিত বাগান। পাশেই একটি নীল বর্ণীয় টিনশেড ঘর যেখানে মনের সুখে বসবাস করেন ষাটোর্ধ্ব শফিউল বশর। বাঁ পা হারিয়ে বর্তমানে তাঁর চিরসঙ্গী এক জোড়া ক্রাচ। সবজি ক্ষেতের ছোট আইলের ফাঁকে ক্রাচে ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে আসার দৃশ্য খুবই মর্মান্তিক।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি। সততা,নিষ্ঠা ও একাগ্রতা থাকলে যেকোনো কাজেই সফলতা পাওয়া যায়। তা প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়েছেন তিনি। একটি পা না থাকলেও ক্রাচে ভর করে মনের জোর দিয়ে সাফল্যের দ্বার খুঁজে পেয়েছেন শফিউল বশর।
তবুও এতে দমে যান নি তিনি। মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতী এলাকায় অত্র উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক দিক নির্দেশনা ও সহযোগিতায় একটানা ১৫ বছর ধরে শবজি চাষ করে যাচ্ছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজের প্রতি শফিউলের ছিল প্রচণ্ড রকম দুর্বলতা। কঠোর পরিশ্রম আর দক্ষতার কারণেই সফলতার মুখ দেখতে পেয়েছেন তিনি। তাছাড়া সবজি চাষ করে তিনি অত্র উপজেলায় ইতিমধ্যে ঈর্ষনীয় সাফল্য লাভ করেছেন।
১৯৯৬ সালে পাশের বাড়ির আগুন নেভাতে গিয়ে পায়ের পাতায় অজ্ঞাত কিছু লেগে যায়। পরে ঐ স্থানে সংক্রমন দেখা দিলে বহু চিকিৎসার পরেও কোন উন্নতি না হওয়ায়, ২০০১ সালে তার বাঁ পা টি হাটি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। অপর একটি পায়ের উপর ভর করে পরিবাবের হাল ধরে কৃষি কাজে অভাবনীয় সফলতা পেয়েছেন তিনি।
পরিবারে স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার তার। শবজি চাষ করে পরিবারের ব্যায় মিটিয়ে তার দুই ছেলেকে বিএ পাশ করিয়েছেন শফিউল। তার ছেলেরা শিক্ষিত হয়েও সানন্দে বাবার কাজে সহযোগীতা করে। বছর দশক আগে মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন তিনি।
শফিউল প্রায় ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ব্যাপকভাবে শুরু করেন শবজি চাষ। পাশেই বয়ে চলা নদী থেকে পর্যাপ্ত পানির সু-ব্যাবস্থা রয়েছে। সাথী ফসল
হিসেবে নানা জাতের সবজি চাষ করেন তিনি। লাভ হয় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। ১০ বিঘা খন্ড খন্ড জমিতে ভিন্ন জাতের শবজির আবাদ করেন। আলু,টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি,মিষ্টি আলু,করলা,খিরা, মরিচ ইত্যাদি ফসল ফলিয়ে শফিউল আনেন অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। এবছর সবজির ফলন ও হয়েছে বেশ। তাছাড়া আলু উত্তোলনের সাথে সাথে সাথী ফসল হিসিবে ভুট্রো চাষ করেন তিনি। শফিউল ২০১৮ সালে দেশের সেরা কৃষক হিসেবে ৩য় স্থান দখলের ক্রেস্ট অর্জন করেন।
শফিউল জানান,পা হারিয়ে আমি নিজেকে কখনো দুর্বল মনে করিনাই। ভিক্ষাবৃত্তি পেশাতে না গিয়ে আমার উদ্যমতা ও পরিশ্রম আমাকে সফলতা এনে দিয়েছে। সবজি চাষ করে আমি বার্ষিক ৫-৬ লক্ষ টাকা উপার্জন করি। আমার ক্ষেতে প্রতিদিন ৮-৯জন শ্রমিক ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে। এতে করে তাদের পরিবারের কর্মসংস্থান হচ্ছে। একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা স্বাবলম্বী হতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না উল্লেখ করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.শাখাওয়াত হোসেন বলেন,শফিউল একই জমিতে একাধিক ফসল ফলান,ফলে ফসলে রোগ বালাইর আক্রমন কম হয়। পাশাপাশি কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হবার সম্বাবনাও থাকে না। তাছাড়া শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও কৃষিতে সফলতা অর্জন করা বিরল দৃষ্টান্ত। অত্র উপজেলায় শফিউল আলমের মতো কৃষি নৈপুণ্যে উদ্যগী হয়ে অনেকে এগিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।