কুয়াশার চাদর যখন নরম ঘাসের ডগা বেয়ে সকালের রোদের আলোয় জ্বলময় করে ঠিক তখনই একদল লোক তাদের জীবিকার সন্ধানে বের হয় গাঁয়ের মেঠো পথের প্রান্তরে। নানান পোশার মানুষের বসবাস এ গাঁয়ে। জীবিকা নির্বাহে ছুটছে এ প্রান্তর থেকে ঐ প্রান্তরে।
করোনা মহামারিতে দরিদ্রসীমার নিছে যাদের বসবাস তারা বেছে নিয়েছে ব্যাতিক্রমী ধরণের পেশা।
মো.ফারুক হোসেন মাটিরাঙ্গার শান্তিপুরে বসবাস।চট্রগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে অনার্স (স্যোসাল ওয়ার্ক) এ ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনাকালে কলেজ বন্ধ থাকায় ব্যাতিক্রমী জীবিকা নির্বাহে গ্রহণ করেন ফারুক। কাক ডাকা ভোরে নিজ এলাকা থেকে চলে যান অনেক দুরে নালশে লাল পিপড়ার ডিমের সন্ধানে। তার সাথে সঙ্গী হয়েছেন অপর ডিম সংগ্রহকারী রফিকুল ইসলাম।
মাটিরাঙ্গার করিম মাষ্টার পাড়ায় মুল সড়কের পাশে সকালের দিকে দেখা যায় দুজন যুবক একটি বড় মাপের বাঁশের মাথায় একটি ঝুড়ি বেঁধে লাল পিপড়ার বাসায় বাঁশটি ঠেকিয়ে নড়াচড়া করছে আর পিপড়ার বাসাটি ছিদ্র হয়ে সাদা সাদা পিপড়ার ডিম সেই ঝুড়ির মধ্যে পড়ছে ।
এক যুবকের নাম ফারুক তার সাথে দীর্ঘ আলাপাচারিতায় তিনি বলেন,পরিবারের অস্বচ্ছতার কারণে নিজের পড়ালেখার খরছ নিজেই বহন করতে হয়। তাই, আমি সারাদিন লাল পিপড়া সংগ্রহ করি।
এ ডিম সংগ্রহে কোন ধরণের পুঁজি লাগেনা। তাছাড়া ক্ষণস্থায়ী পেশা হলেও সেটাকে উপভোগ করি আমি। সারাদিন প্রায় দুই থেকে তিন কেজি ডিম সংগ্রহ করা যায়। প্রতি কেজি ডিম ৫’শ থেকে ৭’শত টাকা বিক্রি করি। এ পিপড়ার ডিম মাছের খুব প্রিয় খাদ্য বিধায় সৌখিন মাছ শিকারীরা বড়শিতে মাছ ধরতে ক্রয় করে থাকে বিধায় এর চাহিদা ব্যাপক।
কিন্তুু এসব পিপড়ার বাসা ভেঙ্গে তাদের বংশকে ধংস করে তাদের ডিম বিক্রি করে জীবিকা অর্জন করে পরিবেশ ভারসাম্য নষ্ট করা এ কেমন পেশা তার কাছ থেকে জানতে চাইলে ফারুক বলেন, এতটা গভীরভাবে বিষয়টি চিন্তা করি নি। ডিম পাই বিক্রি করে পড়ালেখার খরছসহ নিজেদের পারিবারিক চাহিদা মেটাই।
ফারুক হোসেন আরো জানায়,আম,লিচু,কাঁঠালসহ দেশীয় গাছগুলোতেই ডোল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। লালা ব্যবহার করে গাছের একদম মগডালের দিকের কয়েকটি পাতা জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা তৈরি করে সেখানে তারা ডিম পারে পিঁপড়ার দল।
একটি বড় বাসা থেকে একশ থেকে দেড়শ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে দিকে এই ডিমের চাহিদা থাকে বেশি। তবে সব থেকে বেশি ডিম পাওয়া যায় শীতের শেষে দিকে ফাল্গুন মাসে। কিন্তু সেই সময় ডিমের চাহিদা তেমন একটা থাকে না।
ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুব সতর্কতার সাথে করতে হয়। কারণ ডিম আস্ত না রাখলে মাছ তা খায় না। তাছাড়া পিপড়ার কামড় তো খেতেই হয়। লাল পিপড়ার একটা স্বভাব একবার কামড় দিয়ে ধরলে ছাড়তে চায় না।