লিওনেল মেসি ছিলেন বিশ্রামে। টানা খেলার ধকল কাটাতে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকেও। চোট নিয়ে আগেই দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন আনসু ফাতি, জেরার্ড পিকে, সার্জিও বুসকেটসরা। সব মিলিয়ে গতকাল কিয়েভে স্বাগতিক ডায়নামো কিয়েভের বিপক্ষে যে দলটিকে খেলালেন কোচ রোনাল্ড কোম্যান সেটি আক্ষরিক অর্থেই বার্সার দ্বিতীয় দল! তবে এই দল নিয়েও বড় জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। ৪-০ গোলে জিতে উঠে গেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোয়।
গোলকিপার মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগান, সেন্টার ব্যাক ক্লেমেন্ত ল্যাংলেট ও মিডফিল্ডার ফিলিপ কুতিনহো-এই তিন জন ছাড়া অনিয়মিতদের নিয়েই প্রথম একাদশ সাজিয়েছিলেন কোম্যান। দলে থাকলেও জর্ডি আলবা, আতোঁয়ান গ্রিজমান, উসমান ডেম্বেলেদের প্রথম একাদশে না খেলিয়ে আস্থা রেখেছিলেন দলের তরুণদের ওপর। তাঁরা অবশ্য হতাশ করেননি কোচকে। শুরুটা অগোছালো হলেও দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের মতোই খেলেছে বার্সেলোনা। ম্যাচ শেষে তাই মুখে হাসি কোম্যানের, ‘প্রথমার্ধে আমরা কার্যকর না থাকলেও প্রচুর শক্তি নিয়ে খেলেছি। দ্বিতীয়ার্ধে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছি। পাসের বুননে দেখার মতো কিছু ফুটবলও খেলেছি আমরা। দলের সবাই দেখিয়েছে, সাফল্যের জন্য ক্ষুধার্ত তারা। ভালো খেলেছে দলের তরুণরাও।’
তবে প্রথম গোলের দেখা পেতে বার্সাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৫১ মিনিট। পরের মিনিটেই মার্টিন ব্রাথওয়েটের বাড়িয়ে দেওয়া বল ধরে ডি বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন সার্জিও দেস্ত। কোনাকুনি শটে গোল করে এগিয়ে দেন বার্সাকে। এতে একটা ইতিহাসও গড়লেন আমেরিকান দেস্ত। বার্সার জার্সিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো খেলোয়াড়ের এটাই প্রথম গোল।
এর পরের বার্সার দুটি গোল করেছেন প্রথম গোলে বলের জোগানদাতা ব্রাথওয়েট। ৫৭ মিনিটে পিয়ানিচের কর্নার কিকে হেড নিয়েছিলেন অভিষিক্ত অস্কার মিনগুয়েজা। গোললাইনের কাছাকাছি থেকে আলতো টোকায় বল জালে জড়িয়ে দেন ব্রাথওয়েট। ১০ মিনিট পরেই ব্যবধান ৩-০ করেন ব্রাথওয়েট। বক্সের মধ্যে পেছন থেকে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হলে পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পটকিক থেকে করেন নিজের দ্বিতীয় গোল।
ম্যাচের যোগ হওয়া সময়ে বার্সার শেষ গোলটি করেন বদলি খেলোয়াড় গ্রিজমান। কার্লোস অ্যালেনার বাড়িয়ে দেওয়া বলে বক্সে কাটব্যাক করেছিলেন আলবা। আড়াআড়ি শটে বল জালে জড়িয়ে দেন গ্রিজমান।
এই জয়ে চার ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই শেষ ষোলো নিশ্চিত করল বার্সা। আর ম্যাচ হেরে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে ডায়নামো কিয়েভের।
শেষ ষোলোয় রোনালদোর জুভেন্টাসও
ঘরের মাঠে মির্তো উজুনির গোলে ১৯ মিনিটেই পিছিয়ে পড়েছিল জুভেন্টাস। কিন্তু মাঠে রোনালদো থাকলে কি প্রতিপক্ষ ফেরেঙ্কভারোস জয়ের আশা করতে পারে!
৩৫ মিনিটেই গোল পরিশোধ করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আগের ম্যাচে লিগে ক্যারিয়ারির বিপক্ষে জোড়া গোল করে জানিয়েছিলেন ফর্মে থাকার কথা। সেই ফর্ম দেখালেন কালও। বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়ে গোল করেন রোনালদো।
চ্যাম্পিয়নস লিগে পর্তুগিজ উইঙ্গারের এটি ১৩১ তম গোল। ৫৯ মিনিটে আরও একটি গোল পেতে পারতেন তিনি। আলভারো মোরাতার পাস থেকে গোলমুখে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলেও গোল করতে পারেননি। ম্যাচের যোগ হওয়া সময়ে মোরাতার গোলেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে জুভেন্টাস।
৪ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলোয় উঠে গেছে তারাও।
নেইমারের গোল চাপ কমাল পিএসজির
ম্যাচের আগে নেইমারের কাছে গোল চেয়েছিলেন পিএসজি কোচ টমাস টুখেল। কোচকে হতাশ করেননি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
১১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে এগিয়ে দিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু ওই গোলটি বাদ দিলে কাল ঘরের মাঠে জার্মানির লাইপজিগের বিপক্ষে তেমন আক্রমণই শানাতে পারেননি এমবাপ্পে-নেইমাররা।
শেষ ষোলো নিশ্চিত করতে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না পিএসজির। নেইমারের গোল দলের ওপর থেকে সেই চাপটা কমিয়ে দিয়েছে।
বক্সের ভেতর অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াকে এমিল ফর্সবার্গ ফাউল করায় পেনাল্টিটি পেয়েছিল পিএসজি।
রেকর্ডের রাত হাল্যান্ডের
গত শনিবার হার্থা বার্লিনের বিপক্ষে বুন্দেসলিগায় আরলিং হালান্ড করেছিলেন ৪ গোল। সেই ফর্ম ধরে রেখেই চ্যাম্পিয়নস লিগেও কাল জোড়া গোল করলেন ক্লাব ব্রুগার বিপক্ষে। ঘরের মাঠে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে জেতালেন ৩-০ গোলে।
এই জয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই শেষ ষোলোয় উঠে গেছে হালান্ডের দল। আর রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েছেন দলটির নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার। গতকালের জোড়া গোল নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ১২ ম্যাচে তাঁর গোলের সংখ্যা দাঁড়াল ১৬।
এত কম ম্যাচ খেলে ইউরোপ সেরার এই টুর্নামেন্টে ১৬ গোল করতে পারেননি আর কোনো খেলোয়াড়ই।
চ্যাম্পিয়নস লিগে গতকালের অন্যান্য খেলায় ব্রুনো ফার্নান্দেজের জোড়া গোলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছে ইস্তাম্বুল বাশেকশেহিরকে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের আরেক দল চেলসি হ্যান্ডসন উদোয় ও অলিভিয়ের জিরুর গোলে ২-১ ব্যবধানে জিতেছে রেনের বিপক্ষে। লাৎসিও ও সেভিয়া ৩-১ ও ২-১ গোলে হারিয়েছে জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গ ও ক্রাসনোদারকে।